গবাদি পশু পালন ও মোটা তাজাকরন ( গরু )

গবাদি পশু পালন ও মোটা তাজাকরন

 

প্রতিটি পরিবার কিংবা ব্যক্তির একক বা একমুখী রোজগারে সংসার চালানো অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অনেকেই বাড়তি একটা কিছু করতে চায়, কিন্তু সুযোগ হয় না কিংবা হলেও কি করবে, তা খুঁজে পায় না।

 

মোটাজাতকরণের জন্য গরু কিনতে গিয়ে কয়েকটি দিক খেয়াল রাখতে হবে, যেমন:
১) ১ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে গরু কিনতে হবে (১২-১৫ মাস বয়সের গরু মোটাজাতকরনের জন্য ভালো)

২) গায়ের চামড়া ঠিলা-পাতলা, পাঁচরের হাড় চেপ্টা, পায়ের মোট এবং শুধু মাত্র খাবারের অভাবে যে সব গরু শুকিয়ে গেছে এমন গরু কম মূল্যে কিনতে হবে।

৩) মনে রাখতে হবে গর্ভবতী গাভীকে ইউরিয়া মিশ্রিত খড় খাওয়ানো যাবে না। নির্বাচিত গরুকে প্রকল্প মতে প্রক্রিয়াজাত ইউরিয়া মিশ্রিত খড় খাওয়ানোর পূর্বে কিছু চিকিৎসা দিয়ে উপকুক্ত করে নিতে হবে।

ক. গরুর শরীরে কোনো ক্ষত থাকলে সে স্থানে ডেটল বা স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করে নেগোভোন মলম লাগিয়ে প্রয়োজনে ব্যাণ্ডেজ করে রাখতে হবে, যাতে ক্ষত স্থানে মশা-মাছি কিংবা ময়লা জমতে না পারে।
খ. ক্ষত গভীর হলে তা না শুকানো পর্যন্ত আবার পরিস্কার করে মাঝে মধ্যেই মলম ব্যবহার করতে হবে।
গ. ক্ষত সেরে যাওয়ার পর গরুর গায়ের সেসব পরজীবী যেমন-উকুন, আঠালি, সিঁদুর পোকা ইত্যাদি মুক্ত করতে হবে।

 

নিয়মাবলীঃ
একটি গরুর জন্য নিউসিডল বা এনোসটোল পাউডার ১০ কেজি পানিতে ২.৫ চা চামচ মিশাতে হবে। তারপর বাসতি থেকে কিছুটা দূরে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে প্রথমে ভালোভাবে নাক-মুখ বেঁধে কান, চোখ, মুখ ছাড়া শরীরের সর্বত্র ওষুধ মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে কানের ভেতর, চোখের চতুপারর্শ্বে, নাক, মুখ লেজের গোড়া, শরীরের সঙ্গে পায়ের সংযোগস্থলসহ সকল সংকীর্ণ জায়গায় লাগাতে হবে। ওধুষ লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করার পরে পরিস্কার পানি দ্বারা শরীরের সর্বত্র ভালোভাবে ধুয়ে ওষুধমুক্ত করতে হবে। ওষুধ লাগানোর ২/১ দিন পর যদি দেখা যায় ভালোভাবে বাহিত্যক পরজীবী মুক্ত হয়নি তবে ১৫ দিন পরে আবার একই নিয়মে ওষুধ লাগাতে হবে।

 

সর্তকতা
১. যে ব্যক্তি ঔষুধ লাগাবেন, তিনি গরুর শরীরের ক্ষতস্থান সম্পর্কে সচেতন থাকবেন, কারণ এই ঔষুধ বিষ জাতীয়।
২. গরুর শরীরে ক্ষতস্থানকে (যদি ভালোভাবে না শুকিয়ে তাকে) এড়িয়ে ঔষদ প্রয়োগ করতে হবে।
৩. গরুকে ঔষুধ প্রয়োগের পর ভালোভাবে গোসল করিয়ে উক্ত স্থান থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে মুখের বাঁধন খুলতে হবে কারণ গরু স্বভাবত ঔষুধ লাগা ঘাস বা পানি খেয়ে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।

 

অভ্যন্তরীণ পরজীবী মুক্ত করণ
১. গোল কৃমি
২. কলিজা বা পাতা কৃমি।

 

গোল কৃমি
গোল কৃমি মুক্ত করতে নিচের যে কোন একটি ঔষুধ ব্যবহার করা যায়
মেনাফেঙ্ পাউডার = ১ প্যাকেট ১টি গরুর জন্য
অথবা নেমাফেক্স বড়ি = ৩টি বড়ি একটি পূর্ণ বয়স্ক গরুর জন্য = ২টি বড়ি মাঝারি ও ছোট বাছুরের জন্য
অথবা কোপেন পাউডার = ১টি প্যাকেট একটি গরুর জন্য
অথবা রিনটাল পাউডার = ৭.৫ মি গ্রাম প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য
বিঃদ্রঃ রিনটাল পাউডার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভাল কারণ এই ঔষুধে ছোট বড় মাঝারি সব ধরনের কৃমি মারা যায়। গোল কৃমির ঔষুধ খাওয়ানোর পরে সবল গরু ৩ দিন এবং অন্যান্য গরুর ক্ষেত্রে ৭দিন অপেক্ষা করে তবে পাতা কৃমির ঔষুধ প্রয়োগ করতে হবে।

 

. কলিজা বা পাতা কৃমি মুক্তকরণের নিয়মাবলী
চামড়ার নিচে টোডাক্স ইনজেকশন করতে হবে। মাত্রা সাধারণভাবে ২/৩ সিসি প্রাপ্তবয়স্ক গরুর জন্য। মোটাতাজা করতে হলে ঙ্গ সিসি পরিমান ইনজেকশন করতে হয়। এই ঔষুধ প্রয়োগের ৩ দন অপেক্ষা করার পরে ইউরিয়া মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো আরম্ভ করতে হবে। টোডাঙ্ ইনজেকশন ৭ দিন পর পর ২ বার দিতে হবে এবং তখন খাবার বন্ধ করার কোনো প্রয়োজন নাই। গরুকে প্রদানের জন্য দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ তৈরির নিয়মঃ

 

. নং মিশ্রণ
ক. তিলের খৈল = ৪ কেজি
খ. চালের কুঁড়া = ৪ কেজি
গ. গমের ভূষি = ৪ কেজি
ঘ. যে কোন ডালের ভূষি = ৪ কেজি

 

২নং মিশ্রণ
ক. গম ভাঙ্গা =৪কেজি
খ. তিলের খৈল = ৪ কেজি
গ. চালের কুঁড়া = ৪ কেজি
ঘ. ডাল ভাঙ্গা, খেসারি = ৪ কেজি
কৃমি দূর করার পরে গরুকে ইউরিয়া মিশ্রিত উন্নত খাবার দিতে হবে।

 

গরুকে সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে মিশ্রিত উন্নত খাবার দিতে হবে।
১। আঁশ জাতীয় খড় খাদ্যের সাথে মিশিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে
২। দানাদার জাতীয় খাদ্যের সাথে সরাসরিভাবে এবং
৩। ইউরিয়া মোলাসেস বুকের মাধ্যমে

 

খড়ের সাথে মিশিয়ে ইউরিয়া খাওয়ানোর নিয়ম
খড় প্রক্রিয়াজাতকরণ ১০ কেজি খড় ১০ কেজি পানি এবং ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া বায়ুরোধী বড় বাঁশের ডোল (পাত্রবিশেষ) বা ইটের তৈরি হাউজে ৭-১০ দিন আবদ্ধ বায়ুরোধী অবস্থায় রেখে দিতে হবে।
তারপর ঐ খড় বের করে রৌদ্রে শুকিয়ে নিতে হবে যেন ইউরিয়া তীব্র গন্ধ কিছুটা কমে আসে। এই খড় গরু প্রথমে না খেলে কিছুটা চিড়াগুড় মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে (২০০-৫০০ গ্রাম) গরুকে প্রথমে দৈনিক ৫ গ্রাম থেকে শুরু করে সবের্াচ্চ ৫০-৬০ গ্রাম ইউরিয়া খাওয়ানো যায়। ছোট গরুর ক্ষেত্রে ৩০-৪০ গ্রামের বেশী দৈনিক খাওয়ানো উচিত নয়।
দানাদার খাদ্যে ইউরিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন ওজনের গবাদি পশুর দৈনিক খাদ্যের তালিকা।

 

১০০ কেজি দৈহিক ওজনের গবাদিপশুর খাদ্য তালিকা।
ধানের খড় = ২ কেজি
সবুজ ঘাস = ২ কেজি (ঘাস না থাকলে খড় ব্যবহার করতে হবে
দানদার খাদ্যে মিশ্রন = ১.২-২.৫ কেজি
ইউরিয়া = ৩৫ গ্রাম (নিয়মানুযায়ী)
চিটাগুড়া = ২০০-৪০০ গ্রাম
লবণ = ২৫ গ্রাম
দানাদার খাদ্যের সাথে লবন, ইউরিয়া, চিটাগুড় এক সাথে মিশিয়ে দিনে ২ বার দিতে হবে। ধানের খড় এবং কাঁচা ঘাস ছোট ছোট করে কেটে এক সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।

 

১৫০ কেজি ওজনের গবাদিপশুর খাদ্য তালিকা
খড় = ৩ কেজি
কাঁচা ঘাস = ৫-৬ কেজি
দানাদার খাদ্যের মিশ্রন = ১.৫-২ কেজি
চিটাগুড় = ৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া = ৪৫ গ্রাম (নিয়মানুয়ায়ী)
লবন = ৩৫ গ্রাম

 

১৫০২০০ কেজি ওজনের পশুর খাদ্য তালিকা
ধানের খড় = ৪ কেজি
কাঁচা ঘাস = ৫-৬ কেজি
দানাদার খাদ্যের মিশ্রন = ১.৫-২ কেজি
চিটাগুড় = ৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া = ৪৫ গ্রাম (নিয়মানুযায়ী)
লবন = ৩৫ গ্রাম

 

মোটাতাজা করনের গরুকে সর্বক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশ জাতীয় খাবার (খড়, কাঁচা ঘাস) এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। গবাদীপশুকে ইউরিয়া প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রদানে কিছু কিছু সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।

 

১। এক বছরের নিচে গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না।
২। কখনও মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না
৩। গর্ভাবস্থায় ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না।
৪। অসুস্থ গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না, তবে দূর্বল গরুকে পরিমাণের চেয়ে কম খাওয়ানো যেতে পারে।
৫। ইউরিয়া খাওয়ানোর প্রাথমিক অবস্থা (৭ দিন পর্যন্ত পশুকে ঠান্ডা ছায়াযুক্ত স্থানে বেঁধে রাখতে হবে এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। প্রকল্প মেয়াদ তিন মাস, শুরু হবে ইউরিয়া মিশ্রিত খাবার প্রদানের দিন থেকে।

 

এই খবার খাওয়ানো শুরুর ১০-১৫ দিন পর হেমাটোপিন বিএস (১০এমএল) ইনজেকশন মাংসপেশীতে প্রয়োগ করলে মোটাতাজা করণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।

 

উল্লেখিত তিনটি পদ্ধতির মধ্যে খড়ের প্রক্রিয়াজাত করে ইউরিয়া খাওয়ানো সহজ, ব্যয় কম এবং ফল ভালো আসে। এই প্রকল্পগুলো বিভিন্ন বয়সী হতে পারে। যেমন ৩ বা ৪ মাস মেয়াদি। নির্ভর করছে খামারি কেনা গরুটি কি রকম মোটা করে কি দামে বিক্রি করবেন। দাম বেশি চাইলে প্রকল্প মেয়াদ দীর্ঘ হবে এবং কম চাইরে প্রকল্প মেয়াদ স্বল্প হবে। তবে অনেকেই ঈদের বাজারকে চিন্তা করে তার ৪/৫ মাস আগে থেকে প্রকল্প শুরু করেন।
তথ্য সূত্র: শাইখ সিরাজ রচিত ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত

 

গরু মোটাতাজাকরণের প্রয়োজনীয় তথ্য

 

বাংলাদেশে কোরবানির মূল উপাদান হচ্ছে গরু। আর সেটা যদি হয় মোটাতাজা, নাদুস-নুদুস তবে আনন্দের সীমা থাকে না। এ উপলক্ষকে সামনে রেখে যারা গরু মোটাতাজাকরণে আগ্রহী তাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া দরকার। এজন্য দরকার গরু মোটাতাজাকরণে সঠিক ব্যবস্থাপনা। এটি কখন ও কিভাবে করলে বেশি লাভবান হওয়া যায় তার বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক পদ্ধতি নিম্নে দেয়া হলো-

 

অধিক মাংস উৎপাদনের জন্য ২-৩ বছর বয়সের শীর্ণকায় গরুকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় খাদ্য সরবরাহ করে হৃষ্টপুষ্ট গরুতে রূপান্তরিত করাকে গরু মোটাতাজাকরণ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এটির গুরুত্ব হচ্ছে- দরিদ্রতা হ্রাসকরণ, অল্প সময়ে কম পুঁজিতে অধিক মুনাফা অর্জন, অল্প সময়ের মধ্যে লাভসহ মূলধন ফেরত পাওয়া, প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরণ, স্বল্পমেয়াদি প্রযুক্তি হওয়ার কারণে পশু মৃত্যুর হার কম, কৃষিকার্য থেকে উৎপাদিত উপজাত পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে সহজেই মাংস উৎপাদন করা, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে আয় বৃদ্ধি করা।

 

গরু মোটাতাজাকরণের আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সম্পর্কে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু পালন অনুষদের পশু বিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুজাফফর হোসেন জানান-
প্রয়োজনীয় উপাদান, পদ্ধতি ও মোটাতাজাকরণের সঠিক সময় : বয়সের ওপর ভিত্তি করে সাধারণত ৩ মাসের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ করা যায়। অনেক সময় ৪-৬ মাসও লাগতে পারে। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য সুবিধাজনক সময় হচ্ছে বর্ষা এবং শরৎকাল যখন প্রচুর পরিমাণ কাঁচা ঘাস পাওয়া যায়। চাহিদার ওপর ভিত্তি করে কোরবানি ঈদের কিছুদিন আগ থেকে গরুকে উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা দিয়ে মোটাতাজাকরণ লাভজনক।

 

স্থান নির্বাচন : খামার স্থাপনের জন্য স্থান নির্বাচনে নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ শুষ্ক ও উঁচু জায়গা হতে হবে, যাতে খামার প্রাঙ্গণে পানি না জমে থাকে। হ খোলামেলা ও প্রচুর আলো-বাতাসের সুযোগ থাকতে হবে। খামারে কাঁচামাল সরবরাহ ও উৎপাদিত দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণের জন্য যোগাযোগ সুবিধা থাকতে হবে। পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকতে হবে। সুষ্ঠু নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে, যেমন- পানি, মলমূত্র, আবর্জনা ইত্যাদি। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে সম্প্রসারণের সুযোগ থাকতে হবে।

 

গরু নির্বাচন : উন্নত দেশের মাংসের গরুর বিশেষ জাত রয়েছে। বিদেশি গরুর জন্য উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। তাই দেশীয় গরু মোটাতাজাকরণ অধিক লাভজনক। ২-২.৫ বছরের গরুর শারীরিক বৃদ্ধি ও গঠন মোটাতাজাকরণের জন্য বেশি ভালো। এঁড়ে বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধির হার বকনা বাছুরের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তবে বাছুরের বুক চওড়া ও ভরাট, পেট চ্যাপ্টা ও বুকের সঙ্গে সমান্তরাল, মাথা ছোট ও কপাল প্রশস্ত, চোখ উজ্জ্বল ও ভিজা ভিজা, পা খাটো প্রকৃতির ও হাড়ের জোড়াগুলো স্ফীত, পাঁজর প্রশস্ত ও বিস্তৃত, শিরদাঁড়া সোজা হতে হবে।

 

বাসস্থানের গঠন : গরুর বাসস্থান তৈরির জন্য খোলামেলা উঁচু জায়গায় গরুর ঘর তৈরি, একটি গরুর জন্য মাপ হতে হবে কমপক্ষে ১০-১২ বর্গফুট। ভিটায় ১ ফুট মাটি উঁচু করে এর ওপর ১ ফুট বালু দিয়ে ইট বিছিয়ে মেঝে মসৃণ করার জন্য সিমেন্ট, বালু ও ইটের গুঁড়া দিতে হবে। গরুর সামনের দিকে চাড়ি এবং পেছনের দিকে বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য নালা তৈরি করতে হবে। বাঁশের খুঁটি দিয়ে বেঁধে ওপরে ধারি অথবা খড় ও পলিথিন দিয়ে চালা দিতে হবে, ঘরের পাশে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা দরকার। পাশাপাশি দাঁড়ানো গরুকে বাঁশ দিয়ে আলাদা করতে হবে যাতে একে অন্যকে গুঁতা মারতে না পারে। ঘরের চারপাশ চটের পর্দার ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে অতি বৃষ্টি ও অতি ঠান্ডার সময় ব্যবহার করা যায়।

 

খাদ্য : খাদ্যে মোট খরচের প্রায় ৬০-৭০ ভাগ ব্যয় হয়। তাই স্থানীয়ভাবে খরচ কমানো সম্ভব। এজন্য গরু মোটাতাজাকরণের একটি সুষম খাদ্য তালিকা নিচে দেয়া হলো-

 

শুকনা খড় : ২ বছরের গরুর জন্য দৈহিক ওজনের শতকরা ৩ ভাগ এবং এর অধিক বয়সের গরুর জন্য শতকরা ২ ভাগ শুকনা খড় ২-৩ ইঞ্চি করে কেটে এক রাত লালীগুড়-চিটাগুড় মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে প্রতিদিন সরবরাহ করতে হবে। পানিঃচিটাগুড়=২০:১।

 

কাঁচা ঘাস : প্রতিদিন ৬-৮ কেজি তাজা ঘাস বা শস্য জাতীয় তাজা উদ্ভিদের উপজাত দ্রব্য যেমন- নেপিয়ার, পারা, জার্মান, দেশজ মাটি কলাই, খেসারি, দুর্বা ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে।

 

দানাদার খাদ্য : প্রতিদিন কমপক্ষে ১-২ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। নিচে ১০০ কেজি দানাদার খাদ্যের তালিকা দেয়া হলো-
গম ভাঙা-গমের ভুসি ৪০ কেজি চালের কুঁড়া ২৩.৫ কেজি খেসারি বা যে কোনো ডালের ভুসি ১৫ কেজি তিলের খৈল-সরিষার খৈল ২০ কেজি লবণ ১.৫ কেজি।

উল্লিখিত তালিকা ছাড়াও বাজারে প্রাপ্ত ভিটামিন মিনারেল মিশ্রণ ১% হারে খাওয়াতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন রকমের ইউরিয়া মোলাসেস বক ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি হচ্ছে ৩৯ ভাগ চিটাগুড়, ২০ ভাগ গমের ভুসি, ২০ ভাগ ধানের কুঁড়া, ১০ ভাগ ইউরিয়া, ৬ ভাগ চুন ও ৫ ভাগ লবণের মিশ্রণ।

 

রোগ প্রতিরোধ চিকিৎসা : প্র্রতিদিন নিয়মিতভাবে পশুর গা ধোয়াতে হবে। গোশালা ও পার্শ¦বর্তী স্থান সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে। নিয়মিতভাবে গরুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। বাসস্থান সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিমিত পরিমাণে পানি ও সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে। রোগাক্রান্ত পশুকে অবশ্যই পৃথক করে রাখতে হবে। খাবার পাত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। খামারের সার্বিক জৈব নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে। পশু জটিল রোগে আক্রান্ত হলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 

বাজারজাতকরণ : মোটাতাজাকরণ গরু লাভজনকভাবে সঠিক সময়ে ভালো মূল্যে বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ হচ্ছে আরেকটি উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়। বাংলাদেশে মাংসের জন্য বিক্রয়যোগ্য গবাদিপশুর বাজার মূল্যেও মৌসুমভিত্তিক হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। কাজেই একজন প্রতিপালককে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য অবশ্যই গরুর ক্রয় মূল্য যখন কম থাকে তখন গরু ক্রয় করে বিক্রয় মূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে বিক্রয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণত কোরবানির ঈদের সময় গরুর মূল্য অত্যধিক থাকে এবং এর পরের মাসেই বাজার দর হ্রাস পায়। তাই এখন গরু মোটাতাজাকরণের উপযুক্ত সময়। স্বল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ার সহজ এবং সুবিধাজনক উপায়ের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ একটি অত্যন্ত যুগোপযোগী পদ্ধতি।

 

কিন্তু প্রচলিত এবং অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণের তুলনায় আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ অধিক লাভজনক। সুতরাং কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আমাদের দেশের কৃষকরা যদি ওই পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করতে পারে তাহলে প্রতি বছর কোরবানি ঈদের সময় গরু আমদানি কমানো সম্ভব হবে এবং এর ফলে দেশ আর্থিকভাবে বিরাট সফলতা লাভ করতে সক্ষম হবে।
লেখক: মো. শাহীন আলম

 

গ্রোথ হরমোনের ব্যবহার ছাড়া গরু মোটাতাজাকরণ

 

কোনোভাবেই ইনজেকশন বা কোনো গ্রোথ হরমোন ব্যবহার করে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের উদ্যোগ নেওয়া যাবে না। এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার ছাড়াও স্বাভাবিক ও জৈব পদ্ধতিতেই গরু মোটাতাজাকরণ সম্ভব। এজন্য দরকার শুধু কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা।

কোনো গ্রোথ হরমোন ব্যবহার ছাড়াই যেভাবে গবাদিপশুর বেশি মাংস নিশ্চিত করা যায়, সে সম্পর্কে কিছু পদ্ধতি স্বল্প পরিসরে আলোকপাত করা হল: অধিক মাংস উৎপাদনের জন্য ২ থেকে ৩ বছর বয়সের শীর্ণকায় গরুকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় খাদ্য সরবরাহ করে হৃষ্টপুষ্ট গরুতে রূপান্তরিত করাকে গরু মোটাতাজাকরণ বলে। এটির গুরুত্ব হচ্ছে- দারিদ্রতা হ্রাসকরণ, অল্প সময়ে কম পুঁজিতে অধিক মুনাফা অর্জন, অল্প সময়ের মধ্যে লাভসহ মূলধন ফেরত পাওয়া, প্রাণীজ আমিষের ঘাটতি পূরণ, স্বল্পমেয়াদি প্রযুক্তি হওয়ার কারণে পশু মৃত্যুর হার কম, কৃষিকার্য হতে উৎপাদিত উপজাত পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে সহজেই মাংস উৎপাদন করা, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে আয় বৃদ্ধি করা প্রভৃতি।

 

মোটাতাজাকরণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান পদ্ধতিমোটাতাজাকরণের সঠিক সময়: বয়সের উপর ভিত্তি করে সাধারণত ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ করা যায়। অনেক সময় ৫ থেকে ৬ মাসও সময় লাগতে পারে। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য সুবিধাজনক সময় হচ্ছে বর্ষা এবং শরৎকাল যখন প্রচুর পরিমাণ কাঁচাঘাস পাওয়া যায়। চাহিদার উপর ভিত্তি করে কোরবানী ঈদের ৫ থেকে ৬ মাস পূর্ব থেকে গরুকে উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা দিয়ে মোটাতাজাকরণ লাভজনক।

 

স্থান নির্বাচন: গরু রাখার স্থান নির্বাচনে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে১. শুষ্ক ও উঁচু জায়গা হতে হবে, যাতে খামার প্রাঙ্গণে পানি না জমে থাকে
২. খোলামেলা ও প্রচুর আলো বাতাসের সুযোগ থাকতে হবে।
৩.খামারে কাঁচামাল সরবরাহ ও উৎপাদিত দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণের জন্য যোগাযোগ সুবিধা থাকতে হবে
৪. পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকতে হবে;
৫. সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে। গরু নির্বাচন: উন্নত দেশের মাংসের গরুর বিশেষ জাত রয়েছে। বিদেশি গরুর জন্য উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। তাই দেশীয় গরু মোটাতাজাকরণ অলাভজনক। ২ থেকে ২.৫ বছরের গরুর শারীরিক বৃদ্ধি ও গঠন মোটাতাজাকরণের জন্য বেশি ভাল। এঁড়ে বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধির হার বকনা বাছুরের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তবে বাছুরের বুক চওড়া ও ভরাট, পেট চ্যাপ্টা ও বুকের সাথে সমান্তরাল, মাথা ছোট ও কপাল প্রশস্ত, চোখ উজ্জ্বল ও ভেজা ভেজা, পা খাটো প্রকৃতির ও হাড়ের জোড়াগুলো স্ফীত, পাজর প্রশস্ত ও বিস্তৃত, শিরদাড়া সোজা হতে হবে। গরুর খাদ্যের ধরণ: খাদ্যে মোট খরচের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ব্যয় হয়। তাই স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত খাদ্য দ্বারা খরচ কমানো সম্ভব।

 

এজন্য গরু মোটাতাজাকরণের একটি সুষম খাদ্য তালিকা নিচে দেওয়া হলক) শুকনো খড়: দুই বছরের গরুর জন্য দৈহিক ওজনের শতকরা ৩ ভাগ এবং এর অধিক বয়সের গরুর জন্য শতকরা ২ ভাগ শুকনো খড় ২ থেকে ৩ ইঞ্চি করে কেটে একরাত লালীগুড়/চিটাগুড় মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে প্রতিদিন সরবরাহ করতে হবে। পানি: চিটাগুড় = ২০ : ১।
খ) কাঁচাঘাস: প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ কেজি তাজা ঘাস বা শস্যজাতীয় তাজা উদ্ভিদের উপজাত দ্রব্য যেমন- নেপিয়ার, পারা, জার্মান, দেশজ মাটি কালাই, খেসারি, দুর্বা ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে।
গ) দানাদার খাদ্য: প্রতিদিন কমপক্ষে ১ থেকে ২ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

 

নিচে ১০০ কেজি দানাদার খাদ্যে তালিকা দেওয়া হল১. গম ভাঙা/গমের ভূসি-৪০ কেজি;
২. চালের কুঁড়া-২৩.৫ কেজি;
৩. খেসারি বা যেকোনো ডালের ভূসি-১৫ কেজি:
৪. তিলের খৈল/সরিষার খৈল-২০ কেজি; লবণ-১.৫ কেজি।
তাছাড়াও বিভিন্ন রকমের ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি হচ্ছে ৩৯ ভাগ চিটাগুড়, ২০ ভাগ গমের ভূসি, ২০ ভাগ ধানের কুঁড়া, ১০ ভাগ ইউরিয়া, ৬ ভাগ চুন ও ৫ ভাগ লবণের মিশ্রণ।

 

রোগ প্রতিরোধ চিকিৎসাক. প্রতিদিন নিয়মিতভাবে পশুর গা ধোয়াতে হবে;
খ. গো-শালা ও পার্শ্ববর্তী স্থান সর্বদা পরিস্কার রাখতে হবে:
গ. নিয়মিতভাবে গরুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে;
ঘ. বাসস্থান সর্বদা পরিস্কার রাখতে হবে।
ঙ. স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিমিত পরিমাণে পানি ও সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে।
চ. রোগাক্রান্ত পশুকে অবশ্যই পৃথক করে রাখতে হবে।
ছ. খাবার পাত্র পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
জ. খামারের সার্বিক জৈব নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে।
ঝ. পশু জটিল রোগে আক্রান্ত হলে পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 

গরু মোটাতাজাকরণ

 

আমাদের দেশে আমিষজাতীয় খাদ্যের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। মাথাপিছু প্রতিদিন গোশতের প্রয়োজন ১২০ গ্রাম। সেই হিসাবে বার্ষিক প্রয়োজন প্রায় ৬.০ মি:মে: টন। আমাদের উৎপাদন মাত্র ০.৬-০.৭ মি:মে: টন। ক্ষুদ্র ও বৃহত্তর উভয় পরিসরে গরু মোটাতাজাকরণ কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে একদিকে যেমন আমাদের আমিষের যোগান বাড়ানো সম্ভব, তেমনি নতুন কর্মসংস্খান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা যায়। দেশের শিক্ষিত, অশিক্ষিত বেকার যুবক, ভূমিহীন চাষি, প্রান্তিক চাষি গরু মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এ বিষয়ে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ এবং জেলা ও উপজেলা পশুসম্পদ দফতর থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাওয়া যাবে।

 

গরু মোটাতাজাকরণ :

গরু মোটাতাজাকরণ বা বিফ্ ফ্যাটেনিং বলতে বোঝায়, গরুকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্খাপনায় উন্নতমানের খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে মোটাতাজকরণ বা মাংসল করে বাজারজাত করা। এটি একটি লাভজনক ও সম্ভাবনাময় ব্যবসা।

 

মোটাতাজাকরণের উদ্দেশ্যে গরু নির্বাচন বা ক্রয়ের আগে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে :

-সঙ্কর জাতের গরু নির্বাচন বা ক্রয় করা উচিত, এটা তাড়াতাড়ি মোটাতাজা হয়।

-তুলনামূলকভাবে কম দামে ক্ষীণ স্বাস্খ্যের গরু নির্বাচন করতে হবে।

-গরুর চামড়া ঢিলেঢালা হতে হবে।

-গরুর বয়স সাধারণত ১ থেকে ২ বছর বয়সের হওয়া উচিত।

-গরুর পা ও গলা লম্বা, কপাল প্রশস্ত হবে।

-নিখুঁত গরু কিনতে হবে।

-নিরোগ ও সুস্খ গরু ক্রয় বা নির্বাচন করতে হবে।

 

গরু ক্রয় বা নির্বাচনের পর করণীয়:

-গরু ক্রয় বা নির্বাচনের পর সর্বপ্রথমে ডি-ওয়ার্মিং বা কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।

-অন্যান্য বহি:পরজীবী যেমনন্ধ উকুন, আঠালি মুক্ত করতে হবে।

-সুষম খাদ্য ও পরিষ্কার পানি সরবরাহ করতে হবে।

 

গরুর খাদ্য নিরূপণ:

গরু মোটাতাজাকরণের উদ্দেশ্যই হচ্ছে গরুকে দ্রুত মোটাতাজা করা, তাই গরুকে অবারিত পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করা যায়। তবে গরুর ওজন নির্ণয় করেও খাদ্য সরবরাহ করা যেতে পারে। নিুের সূত্রের আলোকে মোটামুটিভাবে ওজন নির্ণয় করা যায়।

গরুর ওজন = =পাউন্ড

পাউন্ডকে কেজিতে রূপান্তরিত করতে হবে।

বুকের পরিধি = সামনের পায়ের পেছনের দিক ঘেঁষে পরিধি পরিমাপ করতে হবে।

দেহের দৈর্ঘ্য = কুঁজ/চুটের মাথা থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত দৈর্ঘ্য।

গরু ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য প্রতিদিন দুই কেজি শুষ্ক আঁশজাতীয় খাদ্য, এক কেজি দানাদার খাদ্য, তবে প্রতি কেজি শুষ্ক আঁশজাতীয় খাদ্য সমান ছয় কেজি কাঁচা ঘাসজাতীয় খাদ্য।

ইউরিয়া ও চিটাগুড় দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খড় খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।

 

খাদ্য পরিবেশন:

-প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
-খাদ্য সরবরাহের আগে পাত্র পরিষ্কার করতে হবে।

-দানাদার খাদ্য সকাল-বিকাল দু’বার সরবরাহ করতে হবে।

-শুকনো অবস্খায় দানাদার খাদ্য দিলে খাদ্য গ্রহণের পরপরই পরিষ্কার পানি সরবরাহ করা উচিত।

-খাদ্য উন্নত ও গুণগত মানের, পরিচ্ছন্ন, ধুলাবালিমুক্ত, টাটকা ও সুস্বাদু হবে।

-খড় বা ঘাস আস্ত না দিয়ে ছোট ছোট করে টুকরো করে দিতে হবে।

 

খাদ্য:

-ইউরিয়া মোলাসেস দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খড়

-সবুজ ঘাস

-গমের ভুসি

-চালের কুঁড়া

-চিটাগুড়

-লবণ

-নিপিয়ার, প্যারা, জার্মান প্রভৃতি উন্নত পুষ্টিমানের ঘাস

-পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন

-মিনারেল (ডিসিপি ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট)

 

গরুর যত্ন  পরিচর্যা:

-প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিন-চার দিন, সম্ভব হলে প্রতিদিন (বর্ষাকালে) গরুকে গোসল করাতে হবে।

-সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণে খাদ্য দিতে হবে।

-গরুর ঘর প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে।

-খাদ্য রাখা এবং তৈরির জায়গা পরিষ্কার ও শুকনো হতে হবে।

-গরুর গোবর ও মূত্র একটু দূরে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে।

-কোনোরকম অসঙ্গতি দেখা দিলে সাথে সাথে হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।

-গরুর ঘরের মেঝে অমসৃণ ও ইট বিছানো হলে ভালো হয়।

-পর্যাপ্ত আলো-বাতাস যাতে ঘরে প্রবেশ করতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

-বাসস্খানের আশপাশের পরিবেশ নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে হলে মশা-মাছির উপদ্রব হবে, এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

 

গরুর মড়ক:

সম্প্রতি রংপুর, ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, পটুয়াখালী, টাঙ্গাইল, বরিশাল, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন স্খানে গরু মারা যাওয়া এবং অসুস্খ হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। গত ২৫ দিনে সারাদেশে অন্তত ৩ শতাধিক গরু মারা যাওয়া এবং কয়েক হাজার গরু অসুস্খ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রংপুরের পীরগঞ্জের একই গ্রামে একই দিনে তড়কা রোগে ১২টি গরু মারা গেছে এবং কয়েক শ’ অসুস্খ হয়েছে। সেগুলোও মারা যাবে। কারণ তড়কা রোগ হলে ১-৩ দিনের মধ্যে গরু মারা যায়। পটুয়াখালীর গলাচিপায় কয়েক হাজার গরুর খুরারোগ হয়েছে। টাঙ্গাইলেও খুরারোগ এবং গরু লাফ দিয়ে ঢলে পড়ে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ রোগকে অনেকেই অজ্ঞাত রোগ বলেছে। কিন্তু এটা অজ্ঞাত রোগ নয়। এটা তড়কা রোগ। গরুর মারা যাওয়া ও অসুস্খ হওয়ার জন্য গরুর মালিকরা খুব উদ্বিগ্ন এবং হালচাষেও খুব সমস্যা হচ্ছে। বর্ষাকালের শুরু থেকে মধ্য পর্যন্ত এ রোগ দুটো ছাড়াও বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা যায়। এসব রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ব্যবস্খা আছে। রোগগুলোর লক্ষণ সম্বìেধ ধারণা থাকলে সহজেই প্রতিরোধ ব্যবস্খা নেয়া যায়।

 

তড়কা রোগ (উবামড়কি/গলি/ধড়কাতীরাজ্বর):

 

কারণ :

গ্রাম পজেটিভ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে হয়। বর্ষাকালের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে এ রোগ বেশি হয়। গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার এ রোগ হয়।

 

লক্ষণ :

-দেহের লোম খাড়া হয়।

-দেহের তাপমাত্রা ১০৬-১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়।

-দেহে কাঁপুনি ওঠে, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত ও গভীর হয়।

-নাক, মুখ ও মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

-পাতলা ও কালো পায়খানা হয়।

-ঘাড়ের পিছনে চামড়ার নিচে তরল পদার্থ জমে ফুলে ওঠে

-ক্ষুধামন্দা, পেট ফাঁপা ও পেটের ব্যথা হয়।

-লক্ষণ প্রকাশের ১-৩ দিনের মধ্যে পশু ঢলে পড়ে এবং মারা যায়।

-মৃত্যুর সাথে সাথে পেটফুলে এবং রক্ত জমাট বাঁধে না।

 

প্রতিরোধ :

-প্রথম ৬ মাস বয়সে পশুকে টিকা দিতে হবে। পরে প্রতি বছর বয়সে একবার করে টিকা দিতে হবে

-সুস্খ পশুকে পৃথক রাখতে হবে।

-পশুর মল, রক্ত ও মৃতদেহ মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে

-পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্ত শুকনা স্খানে লালন-পালন করতে হবে।

 

চিকিৎসা :

-পেনিসিলিন/বাইপেন ভেট/জেনাসিন ভেট/এম্পিসিন ভেট ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে। এ ছাড়াও স্ট্রেপটোমাইসিন/এন্টিহিস্টাভেট ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে।

 

খুরারোগ (বাতাজ্বারাতাপাএসোখুরাপাকা):

 

কারণ :

পিকরনা নামক ভাইরাস দ্বারা এ রোগ হয়। জোড়া খুরবিশিষ্ট পশু যেমনন্ধ গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া ইত্যাদিতে এ রোগ হয়। বর্ষার স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে এ রোগ বেশি হয়।

 

লক্ষণ :

-মুখে, জিহ্বায় ও খুরে ফোস্কা পড়ে

-ফোস্কা ফেটে ঘা হয়।

-নাক ও মুখ দিয়ে লালা ঝরে।

-পশু খুঁড়িয়ে হাঁটে

-পশু শক্ত কিছু খেতে পারে না।

-ওলানের বাঁটে ক্ষত ও দুর্গìধ হয় এবং কষ ঝরে

-ক্রমে পায়ের খুর খসে পড়ে।

-পশু দুর্বল হয়ে পড়ে।

-দেহের তাপমাত্রা বাড়ে

-গাভীর দুধ কমে যায়।

 

প্রতিরোধ :

তড়কা রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্খা অবলম্বন করতে হবে।

 

চিকিৎসা :

-হালকা গরম পানির সাথে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মিশিয়ে ক্ষতস্খানে দৈনিক ২-৩ বার ধুয়ে দিতে হবে।

-সোহাগা (বোরাক্স) বা বরিক পাউডার মধু বা গ্লিসারিনের সাথে মিশিয়ে ক্ষতস্খানে লাগাতে হবে।

-পশুকে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন (প্রোনেপেন/এসপিভেট/ ডায়াডেট/ সুমিডভেট/জেনসিনভেট) দিতে হবে।

-জ্বর কমানোর জন্য ডিক্লোডেট খাওয়াতে হবে।

-নারকেল তেল ও তারপিন তেল ৪:১ অনুপাতে মিশিয়ে ক্ষতে লাগাতে হবে।

-পশুকে নরম খাদ্য খাওয়াতে হবে।

 

সাবধানতান্ধ :

-কাদামাটি বা পানিতে পশুকে রাখা যাবে না।

-খোসকা পাতা দিয়ে ক্ষতস্খান ঘষা যাবে না।

 

বাদলা রোগ (কালোজহরতসুজওরাকৃষজঙ্গ রোগ):

 

কারণ :

গ্রাম পজেটিভ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার ৬ মাস থেকে দু’বছর বয়সে এ রোগ বেশি হয়। দেহের ক্ষত ও মলের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়।

 

লক্ষণ :

-পশুর দেহের মাংসপেশি ফুলে যায় এবং গায়ের চামড়া খসখসে হয়।

-ফোলা স্খানে গরম অনুভূত হয় এবং হাত দিলে চটচট শব্দ হয়।

-ফোলা স্খানে পচন ধরে এবং পশু মারাও যেতে পারে

-দেহের তাপমাত্রা ১০৫-১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট বাড়ে।

-কখনো পশুর পেট ফাঁপে এবং পশু খোঁড়াতে থাকে।

-খাওয়া ও জাবর কাটা বìধ হয় এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।

-দেহের পশম খাড়া হয়। পশু নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

-আক্রান্ত স্খানে কাটলে গাঢ় লাল দুর্গìধযুক্ত ফেনা বের হয়।

 

প্রতিরোধ :

তড়কা রোগের পদ্ধতিতে রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

 

চিকিৎসা :

-পশুর শিরা বা ত্বকের নিচে প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ হাজার ইউনিট পেনিসিলিন ইনজেকশন দিতে হবে।

অথবা ৩-৫ মিলিগ্রাম টেট্রাসাইক্লিন ইনজেকশন দিতে হবে। অথবা বাইপেনভেট/এমপিসিনভেট/ এন্টিহিস্টাভেট ইনজেকশন

দেয়া যেতেপারে।

 

ওলান ফোলা/প্রদাহ রোগ (ওলান পাকাঠুনকো ইত্যাদি):

 

কারণ :

ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়ে এ রোগ হয়। অস্বাস্খ্যকর স্যাঁতসেঁতে বাসস্খান এবং ময়লা হাতে দুধ দোহানো, ওলানে আঘাত প্রভৃতি কারণে রোগজীবাণু সংক্রমিত হয়।

 

লক্ষণ :

-ওলান লাল হয়ে ফুলে যায়।

-ওলান শক্ত ও গরম হয় এবং ওলানে ব্যথা হয়।

-দুধ ছানার মতো ছাকা ছাকা হয়।

-দুধের সাথে রক্ত বের হতে পারে।

-ওলান ও বাঁট নষ্ট হয়ে গাভীর দুধ বìধ হয়ে যায়।

-দুধ উৎপাদন বìধ হয়।

 

প্রতিরোধ :

-পশু শুকনো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্খানে লালন-পালন করতে হবে।

-ওলান সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে।

-হাত জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে দুধ দোহন করতে হবে।

-ওলান গরম হলে ঠাণ্ডা বা ঠাণ্ডা হলে গরম সেক দিতে হবে।

 

চিকিৎসা :

-আক্রান্ত পশুকে জেনাসিনভেট/ এমপিসিন ভেট/ ক্লোফেনাক ভেট/ এন্টিহিস্টাভেট ইনজেকশন দিতে হবে।

-সরিষার তেল ও কর্পূর তেল মিশিয়ে ওলানে মালিশ করা যেতে পারে।

 

ডায়রিয়া/পাতলা পায়খানা/উদরাময় রোগ:

 

কারণ :

ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়া জাতীয় জীবাণু দ্বারা হয়। বর্ষার সময় দূষিত খড়, পচা লতাপাতা, পচা পানি, পচা খাদ্য খেয়ে এ রোগ হয়।

 

লক্ষণ :

-ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়।

-মুখ দিয়ে লালা ঝরে।

-মলের সাথে রক্ত বের হয়।

-পেটের ডান দিকে চাপ দিলে পশু ব্যথা পায়।

 

প্রতিরোধ :

-পরিষ্কার টাটকা খাদ্য খাওয়াতে হবে।

-বাচ্চা জন্মের পরই ২% আয়োডিন দিয়ে নাভি মুছে দিতে হবে।

-জন্মের পর ২ ঘন্টার মধ্যে কলস্ট্রাম সিরাপ খাওয়াতে হবে।

-জীবাণুমুক্ত বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে।

 

চিকিৎসা :

-স্যালাইন খাওয়াতে হবে।

-সালফা প্লাস ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে।

-কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।

 

নিউমোনিয়া:

 

কারণ :

বিভিন্ন জীবাণুর (ব্যাকটেরিয়া, রিকেটশিয়া, ভাইরাস) সাথে এলার্জেন, আঘাত, ক্লান্তি, ঠাণ্ডা লাগা, বৃষ্টিতে ভেজা, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, আর্দ্র আবহাওয়া ইত্যাদি কারণে এ রোগ হয়।

 

লক্ষণ :

-আক্রান্ত পশুতে প্রথমে অল্প জ্বর ও কাশি এবং পরে ঘনঘন কাশি দেয়।

-নাক ও মুখ দিয়ে সাদা সর্দি বের হয়।

-দ্রুত ও গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।

-শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শব্দ হয়।

 

প্রতিরোধ :

-বৃষ্টি, ঠাণ্ডা, আর্দ্র ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে পশু রাখা যাবে না। শুকনো ও গরম স্খানে রাখতে হবে।

 

চিকিৎসা :

পশুকে জেনাসিনভেট/ ওটেট্রাভেট/ কোট্রিমভেট ইনজেকশন দিতে হবে। যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ পশুর মধ্যে দেখলে উপজেলা পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

 

উন্নত জাতের গাভী পালন:

 

গাভীর থাকার ঘরঃ

-ঘরটি মোটামুটি খোলামেলা জায়গায় হতে হবে।

-বাঁশ, ছন, ঘড়, পাটঘড়ি ইত্যাদি দিয়ে ঘর নির্মাণ করা যাবে।

-ঘরের মেঝে ঢালু ও ড্রেনের ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে চোন ও পানি গড়িয়ে বেরিয়ে যেতে পারে।

-খাদ্য ও পানির পাত্র গুলো প্রতিদিন নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে।

-খাওয়া শেষ হলে পাত্রগুলো ঢেকে রাখাই ভাল।

 

স্বাস্থ্য পরিচর্যাঃ

-গরুকে নিয়োমিত গোসল করাতে হবে।

-প্রতিদিন নিয়মিত গোয়াল ঘরের গোবর- চোনা পরিস্কার করে নিদ্রিষ্ঠ স্থানে বা গর্তে জমা করততে হবে। যা পরবর্তীতে মূল্যবান সারে পরিনত হয়।

-গরুর গায়ের আঠালি , ডাসা(মাছি), জোঁক ইত্যাদি অবাঞ্চিত পোকা-মাকড় বেছে ফেলতে হবে।

-গরুর স্বাস্থ্য নিয়মিত পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।

-উপজেলা পশুসম্পদ কার্যালয় হতে গবাদি পশুকে গো-বসন্ত, তরকা, বাদলা, গলাফুলা, ক্ষুরা রোগের প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।

-গবাদি পশুর রোগ দেখা দিলে পশু চিৎিসক বা নিকটস্থ উপজেলা পশুসম্পদ কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

 

উন্নত জাতের গাভী প্রাপ্তি স্থানঃ

মানিকগঞ্জ, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল , সৈয়দপুর, ঠাকুরগাঁ, চিনিরবন্দর, রংপুরসদর, বগুড়া সদর, রাজশাহী সদর, ঢাকা সদর, নারায়নগঞ্জ সদর, কুমিল্লা সদর, চট্টগ্রাম সদর, সিলেট সদর, বাঘাবাড়ীঘাট মিল্কভিটা এলাকা, সাভার এলাকার মুশুরী খোলা, ভার্কুতা, কেরানীগঞ্জ উপজেলার আটি এলাকা উল্লেখযোগ্য।

 

পালনের জন্য –

দেশী উন্নত জাতের অথবা সংকর জাতের গাভী পালনের জন্য নির্বাচন করতে হবে।

 

দৈনিক সুষম খাদ্যতালিকা (গ্রাম হিসেবে):

গাভীর দুধ দেয়া অবস্থায় (১২৫দিন) তারপর পরিবর্তন করতে হবে।

-চালের গুড়া ২৫০

-গমের ভুষি ২৫০

-খৈল ২৫০

-ডালের ভষি ২৫০

-চিটাগুড় ২০০

-লবন/খনিজ

-মশ্রণ ভিটামিনসহ ৫০

 

এছাড়াও দৈনিক অন্তত:

৩ কেজি খড় অথবা ৯-১২কেজি কাঁচা ঘাস ও প্রচুর পরিমানে ঠান্ডা পরিস্কার পানি খাওয়াতে হবে।

 

রোগ প্রতি রোধ :

রোগের নাম প্রয়োগের স্থান বয়স পুর্ণ প্রয়োগের সময়

তড়কা চামড়ার নীচে ১ বৎসর ১বৎসর পর পূর্ণ প্রয়োগ করতে হবে।

গলাফুলা চামড়ার নীচে ৬ মাস ৬ মাস পর পূর্ণ প্রয়োগ করতে হবে।

বাদলা চামড়ার নীচে ৬ মাস ৬ মাস পর পূর্ণ প্রয়োগ করতে হবে।

ক্ষুরারোগ গলার দুপাশে ৪-৬ মাস ১বৎসর পর পূর্ণ প্রয়োগ করতে হবে।

গো-বসন্ত চামড়ার নীচে ১ বৎসর ১বৎসর পর পূর্ণ প্রয়োগ করতে হবে।

জলাতংক টিকা মাংস পেশী ১ বৎসর ১বৎসর পর পূর্ণ প্রয়োগ করতে হবে।

 

বাছুর এর পরিচর্যা :

-চালের গুড়া ৩০০ গ্রাম

-গমের ভষি ৩০০ গ্রাম

-খৈল ২৫০ গ্রাম

-চিটাগুড় ১৫০ গ্রাম

-লবন ও ভিটামিন ৫০ গ্রাম

এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমানে খড়, কাঁচাঘাস ও বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি খাওয়াতে হবে।

ছয় মাস বয়সে বাছুরকে সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।

বাছুরকে কৃমির ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ মতে দিতে হবে।

স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে সুষম খাদ্য দিতে হবে।

 

গড়ে তুলুন ডেইরি ফার্ম

 

পড়াশোনা শেষ করে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরা গতানুগতিক চাকরি বা ব্যবসার আশায় বসে থাকে। এ সকল চাকরি বা ব্যবসার আশায় না থেকে আমরা যদি নিজেরাই আত্দকর্মসংস্থানের জন্য কিছু গঠনমূলক কাজ করি তাহলে আমাদের ভাগ্যের সঙ্গে সঙ্গে সমাজকেও আমরা কিছু উপহার দিতে পারব। এজন্য দরকার আত্দবিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠা। সমাজে এমন অনেক ব্যতিক্রমী পেশা রয়েছে যেখানে একটু পরিশ্রম ও চিন্তাভাবনা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করলে সফলতা দরজায় এসে কড়া নাড়বে। আমাদের ক্যারিয়ার পাতায় প্রতিদিনই আমরা চেষ্টা করি কিছু গঠনমূলক প্রজেক্টের ধারণা দিতে। আজকে এরকম একটি প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করা হলো। এটি হলো ডেইরি ফার্ম।

 

বাংলাদেশে এখন সফল ডেইরি ফার্মের সংখ্যা অনেক। দিন দিন এর চাহিদা ও বাজার বাড়ছে। একদিকে যেমন এ থেকে আদর্শ খাবার হিসেবে দুধ, আমিষের চাহিদা মেটাতে মাংস এবং জ্বালানি হিসেবে গোবর ও জৈব সার পাওয়া যাবে, তেমনি অন্যদিকে এ খাত থেকে বেশ ভালো আয় করাও সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে অল্পবিস্তর জ্ঞান থাকতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিলে।

 

প্রাথমিক প্রয়োজন : যেকোনো কিছু গড়তে সবার আগে প্রয়োজন প্রাথমিক প্রস্তুতি। এ প্রস্তুতির উপর নির্ভর করে যে কোনো কাজের সফলতার ও ব্যর্থতা। ডেইরি ফার্ম গড়ে তুলতে প্রয়োজন আর্থিক সঙ্গতি, অভিজ্ঞতা ও গরুর নিরাপদ আশ্রয়। প্রথমেই বিশাল ফার্ম তৈরিতে হাত না দিয়ে ছোট পরিসরে কাজে হাত দেওয়া ভালো। ৫ থেকে ৬টি গরু নিয়ে যাত্রা করে আস্তে আস্তে ফার্মকে সম্প্রসারণ করাই উত্তম। ২টি গরুর জন্য একজন দক্ষ লোক নিয়োগ করা গেলে ভালো। তবে খেয়াল রাখতে হবে লোকটির গরুর যত্ন নেয়ার পূর্বঅভিজ্ঞতা আছে কিনা।

 

বাছাই প্রক্রিয়া : নিজ এলাকায় বিশেষ করে মফস্বলে গরুর ফার্ম গড়ে তোলাই শ্রেয়। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন গরুর উন্নত জাত বাছাই। উন্নত জাতের গরু বাছাই না করলে সারা বছর ফার্মে রোগবালাই লেগে থাকবে । ভালো জাতের গরুর পাশাপাশি ফার্মে পর্যাপ্ত ঘাস, খৈল বিচালির ব্যবস্থা রাখতে হবে। ফার্ম গড়ে তোলার পরপরই দুধ বিক্রির জন্য প্রচারণা চালাতে হবে।

 

স্থান নির্বাচন : যেখানে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো এবং দুধ বিক্রির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এসব এলাকার আশপাশেই ডেইরি ফার্ম গড়ে তোলা প্রয়োজন। চারপাশে উঁচু দেওয়াল, পরিবেশসম্মত আবাসন, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস এবং গরুর বিশ্রাম ও হাঁটাচলার জন্য জায়গা থাকতে হবে। গরুর ওষুধের দোকান, কাঁচা ঘাসের খামার আশপাশে থাকলে ভালো।

 

খাবার সরবরাহ : ডেইরি ফার্মের জন্য সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে গরুর খাবারের প্রতি। পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন খাবার না পেলে সঠিক পরিমাণ দুধ পাওয়া যায় না। ধানের কুঁড়া, গমের ভুসি, ছোলা, খেসারির খোসা, লবণ, খৈল, নারিকেলের ছোবড়া, ঘাস-বিচালির পর্যাপ্ত সংগ্রহ রাখতে হবে। অনেক সময় বাসি ও পচা খাবার গরুকে সরবরাহ করা হয়। যা কখনোই ঠিক নয়। এতে করে গরুর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সবসময়ই খেয়াল রাখতে হবে গরুর খাদ্য যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পুষ্টিমান সম্পন্ন হয়। এ জন্য পচা বা দীর্ঘদিন রাখা এসব পণ্য গরুকে খাওয়ানো উচিত নয়। গাভীর গর্ভধারণ ও গর্ভকালীন আলাদাভাবে পরিচর্যা করতে হবে। এ সময় স্থানীয় পশু চিকিৎসকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।

 

আয়ব্যয় : ডেইরি ফার্ম একটি দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম। সঙ্গে সঙ্গেই লাভের আশা করা ভুল। বরং ধীরে সুস্থে এগুলেই ভালো ফল পাওয়া যাবে। গড়ে এক একটি গরু কিনতে ৩০-৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। এছাড়া যত বেশি গরুর সংখ্যা বাড়বে খরচের খাতও তত কমবে। বর্তমানে শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকান ও কনফেকশনারীর লোকজন সরাসরি ফার্মে এসে দুধ সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। গড়ে এক একটি গরু থেকে মাসে ৪-৫ হাজার টাকার দুধ বিক্রি করা সম্ভব। খরচ বাদে এই লাভ একটি পরিবারের জন্য কম নয়।

 

পরিচর্যা : উন্নত জাতের গাভী ডেইরি ফার্মের জন্য সহায়ক। এ ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ান গাভীর জাত বেছে নেওয়া যেতে পারে। এজন্য পশু খামারি এবং পশু কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে নিলে ভালো হয়। প্রতিটি গরুর জন্য আলাদা মশারি, ফ্যান, ময়লা পরিষ্কারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আলোর জন্য লাইটিং এবং পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারেও নজর দেওয়া জরুরি।

 

পশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যা : দেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় পশু চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া সরকারিভাবেও খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্য ছাড়াও ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যুব উন্নয়ন, কৃষিব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকেও প্রশিক্ষিত তরুণরা বিনা জামানতে বেশ মোটা অংকের ঋণ সহায়তা পেতে পারেন। বেকার শিক্ষিত তরুণদের জন্য এটি হতে পারে একটি চমৎকার পেশা।

 

তাই নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে সচেষ্ট হই এবং এরকম ডেইরি ফার্ম করে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হই।
এগ্রোবাংলা ডটকম

 

গাভীর দুধের উত্পাদন যেভাবে বাড়াবেন

 

গাভীর দুধ উত্পাদনের পরিমাণ ও গুণগতমান জাতের ওপর নির্ভর করে। গাভীর দুধ উত্পাদনের পরিমাণ দুধের উপাদান যেমন-মাখন, আমিষ, খনিজ পদার্থ সবই বিভিন্ন জাতের গাভীতে কম-বেশি হতে পারে। বংশগত ক্ষমতার কারণ দেশীয় জাতের গাভীতে দুধের মাখনের পরিমাণ বেশি থাকে কিন্তু এরা দুধ উত্পাদন করে কম। সিন্ধি, শাহিওয়াল, হরিয়ানা জাতের গাভীর দুধে মাখন বা ননীর পরিমাণ অন্য বিদেশীয় জাতের গাভী যেমন হলস্টেন, ফ্রিজিয়ান, জার্সি ইত্যাদি জাতের গাভী সিন্ধি, শাহিওয়াল, হরিয়ানা প্রভৃতি গাভী থেকে বেশি দুধ দেয়।

 

খাদ্য গাভীর দুধ উত্পাদন ও দুধের গুণগতমানের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। অধিক পরিমাণ খাদ্য খাওয়ালে বেশি দুধ পাওয়া যায়। তবে খাদ্য অবশ্যই সুষম হতে হবে। গাভীকে সুষম খাদ্য না খাওয়ালে দুধ উত্পাদনের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায় এবং দধের গুণগতমানও কমতে বাধ্য। কারণ খাদ্যে বিদ্যমান উপাদানগুলো ভিন্ন অবস্থায় দুধের মাধ্যমে নিঃসৃত হয়। খাদ্যে দুধের মাখনের উপস্থিতির পরিমাণ কম-বেশি করতে পারে। নিম্নোক্ত ধরনের খাদ্যের জন্য গাভীর দুধের মাখনের হার কম হতে পারে।
১. মাত্রাতিরিক্ত দানাদার খাদ্য খাওয়ালে।
২. পিলেট জাতীয় খাদ্য খাওয়ালে।
৩. অতিরিক্ত রসালো খাদ্য খাওয়ালে এবং
৪. মিহিভাবে গুঁড়ো করা খড় খাওয়ালে।

 

গাভীর দুধে মাখনের পরিমাণ কমে গেলে খাদ্য পরিবর্তন করে প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে। দুধে খনিজ পদার্থ ও খাদ্যপ্রাণের পরিমাণ গাভীর খাদ্যের মাধ্যমে বাড়ানো যায়। গাভীকে সুষম খাদ্য না দিলে দুধে সামান্য মাত্রায় আমিষ ও শর্করা জাতীয় উপাদান পাওয়া যায় এবং দুধ উত্পাদনের পরিমাণ কমে যায়। দুধ দোহন বিশেষ করে দোহন কাল, দোহনের সময়, দুধ দোহন প্রক্রিয়া, বিভিন্ন বাঁটের প্রভাব ইত্যাদি গাভীর দুধের পরিমাণ ও মানকে প্রভাবিত করে। গাভীর দুধ দেয়ার পরিমাণ আস্তে আস্তে ৫০ দিনে বেড়ে সর্বোচ্চ হয়। ওলানে দুধের চাপের ওপর দুধের পরিমাণ ও উপাদান নির্ভর করে। দুগ্ধদান কালের ৯০ দিন পর থেকে দুধে মাখন ও আমিষের হার আংশিক বাড়ে। একই গাভীকে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দোহন করলে দুধে মাখনের পরিমাণ বেশি পাওয়া যায়। তাই সকালের দুধের চেয়ে বিকালের দুধে মাখনের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই গাভীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২-৩ বার দোহন করা উচিত। এতে দুধ উত্পাদনের পরিমাণ বাড়তে পারে।

 

প্রসবকালে গাভীর সুস্বাস্থ্য আশানুরূপ দুধ উত্পাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাভী থেকে বেশি দুধ পেতে হলে গর্ভকালে সুষ্ঠু পরিচর্যা ও সুষম খাদ্য দেয়া প্রয়োজন। প্রসবের দুই মাস আগে গাভীর দুধ দোহন অবশ্যই বন্ধ করে দিতে হবে। মোট দুধ উত্পাদনের ৪০% ওলানের সামনের অংশের বাঁট এবং ৩০% পেছনের অংশের বাঁট থেকে পাওয়া যায়। গাভীর ওলানের বাঁট অবশ্যই সুস্থ থাকতে হবে।

 

রক্ষণাবেক্ষণ, বাসস্থান, গাভীর দুধ উত্পাদনের পরিমাণ ও গুণগতমানের হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য অনেকাংশে দায়ী। পারিপার্শ্বিক অবস্থা গাভীর জন্য আরামদায়ক হওয়া উচিত। দোহনের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন না করলে অর্থাত্ দুধ দোহন ত্রুটিপূর্ণ হলে দুধ উত্পাদনের পরিমাণ ও গুণগতমান কমতে পারে।

 

প্রতিকূল আবহাওয়া দুধ উত্পাদনের জন্য ক্ষতিকর। শীত মৌসুম দুধাল গাভীর জন্য আরামদায়ক। এ মৌসুমে দুধ উত্পাদনের এবং দুধে মাখনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, গরমকাল, বর্ষাকাল, আর্দ্র আবহাওয়ায় গাভীর দুধের উত্পাদন ও গুণগতমান হ্রাস পায়। গরমের দিকে গাভীকে ঠাণ্ডা অবস্থায় রাখলে উত্পাদনের কোনো ক্ষতি হয় না। গাভীর প্রজননের সময় দুধ উত্পাদন কমে যায়।

 

দীর্ঘ বিরতিতে বাচ্চা প্রসব করলে গাভীর দুধ উত্পাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। স্বল্প বিরতিতে বাচ্চা প্রসবের কারণে দুধ উত্পাদন কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। তাই গাভীকে বাচ্চা প্রসবের ৬০-৯০ দিনের মধ্যে পাল দিতে হবে। কোনোক্রমেই ৬০ দিনের আগে প্রজনন করানো উচিত নয়। গাভীর শরীরে ৫০% এবং দুধে প্রায় ৮৭% পানি থাকে। তাই গাভীকে ইচ্ছামত পানি পান করার ব্যবস্থা করলে দুধ উত্পাদন বেশি হয় এবং দুধে মাখনের পরিমাণ বেশি থাকে।
এগ্রোবাংলা ডটকম

 

গাভীর বড় ওলানের পরিচর্যা

 

অধিক দুধ উত্পাদনকারী গাভীর দৈহিক আকার যেমন বড় হয় তেমনি বড় হয় তার ওলানও। এসব গাভী যত্নসহকারে পরিচর্যা করতে হয়। বড় ওলান নিয়ে গাভীর চলাফেরা ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় ওলানে আঘাত লেগে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। এতে বিভিন্ন রোগ-জীবাণু বাসা বেধে ম্যাসটাইটিস হতে পারে। এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পেতে এসব গাভী অন্যান্য গরু থেকে আলাদা করে পালন করা হয়। এত সতর্কতার পরও উঠা-বসার সময় শেডের কনক্রিটের মেঝেতে ঘষা লেগে ওলানে ক্ষত সৃষ্টি হয়। আর তাতে গোবর বা চোনা লেগে রোগ-জীবাণুর আক্রমণে গাভী অসুস্থ্র হয়। ওলানে সমস্যা দেখা দিলে দুধ উত্পাদন হ্রাস পায়। ম্যাসটাইটিস মারাত্মক আকার ধারণ করলে কখনো কখনো ওলানের এক বা একাধিক বাঁট কেটে ফেলতে হয়। তখন দুধ উত্পাদন অর্ধেকের নিচে নেমে আসে।

 

ওলানে আঘাতজনিত সমস্যা এড়াতে কনক্রিটের পরিবর্তে বালির মেঝে অধিক স্বাস্থ্যসম্মত বলে অভিমত দিয়েছে ডেয়রি বিজ্ঞানীরা। এই বালির মেঝে তৈরি করতে হবে বিশেষ প্রক্রিয়ায়। প্রায় দেড় মিটার সমপরিমাণ গভীর করে মাটি শেডের মেঝে থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এরপর কমপক্ষে দু’স্তরে বড় বড় টায়ার বসাতে হবে। টায়ারের উপর বিছিয়ে দিতে হবে পরিষ্কার বালু। বালু অবশ্যই কাঁকর, ইটের টুকরা, লোহার টুকরা বা অন্যান্য যেকোনো ধারালো বস্তুমুক্ত হতে হবে। রোগের সংক্রমণমুক্ত এলাকা থেকে এই বালু সংগ্রহ করতে হবে।

 

বালির মেঝে নরম হওয়ায় গাভী উঠে দাঁড়ানো কিংবা বসার সময় কোনো ধরনের আঘাত পাবে না। ওলানের আঘাতজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পাবে। এ মেঝের সুবিধাজনক দিক হচ্ছে গাভীর চোনা সহজেই ঝুরঝুরে বালিতে পড়ে শুকিয়ে যাওয়া। তবে বালি যেন ভেজা না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ জন্য দিনে কমপক্ষে দু’বার গোবর পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। সব বালি সপ্তাহে কমপক্ষে তিনদিন উলোট পালোট করে দিতে হবে। উপরের বালি নিচে এবং নিচের বালি উপরে উঠে এলে রোগ-জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে পারবে না, রোগ বাসা বাধার সুযোগ পাবে না। ছয় মাস অন্তর অন্তর শেডের পুরানো বালি ফেলে দিয়ে নতুন বালি দিতে হবে।

Scroll to Top